বাঙালি অথচ ভোজনরসিক নয় এমন খুব কম ই আছেন এবং বাঙালি অথচ পাকস্থলী সম্বন্ধে অবহিত নন , এমনটাও খুব কম জন ই আছেন। তাই বাঙালির জীবনে অপরিহার্য এই পাকস্থলীর ক্যান্সার নিয়েই আজকে আমাদের আলোচনা।
আলোচনা শুরু করার আগে জাস্ট একটা স্ট্যাটিস্টিক্স দিয়ে আলোচনা শুরু করছি। 2020 সালে ইন্ডিয়া তে প্রজেক্টেড স্টম্যাক ক্যান্সার এর যে ছবি, তা হলো প্রতি ১৬০ জন পুরুষে ১ জন আর প্রতি ৩১৯ জন মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১ , অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মহিলাদের তুলনায় পুরুষ দের স্টম্যাক ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি।
( Ref : Cancer Statistics, 2020: Report From National Cancer Registry Programme, India )
স্টম্যাক এর অভ্যন্তরীণ লাইনিং সেল গুলো যখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়তে থাকে তখন স্টম্যাক ক্যান্সার ফর্ম করে। টিউমার স্টম্যাকের যেকোনো জায়গাতেই হতে পারে কিন্তু সব থেকে বেশি দেখা যায় স্টোমাকের
ভিতরের মিউকাস লাইনিং এর গ্র্যান্ডুলার টিস্যু তে। এগুলোকে এডিনোকার্সিনোমা বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার ও বলা হয়।
স্টম্যাক ক্যান্সার এর কিছু বিভিন্ন ধরণ আছে তার মধ্যে বেশি রুগী দেখা যায় এই এডিনোকার্সিনোমা নিয়ে এবং কিছুটা বিরল হলেও ইদানিং কালে কিছু রুগী আমরা পাচ্ছি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্ট্রোম্যাল টিউমার ( GISTs ) নিয়েও।
ঠিক সময়ে এই ধরণের ক্যান্সার ধরা না পড়লে বা ট্রিটমেন্ট শুরু না হলে সেগুলি আমাদের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম আর লিম্ফ্যাটিক গ্লান্ড গুলোর মাধ্যমে সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন প্রধানত লিভার বা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্যান্সার কেন হয় এর উত্তর টা আজও একটু মেঘে ঢাকা। স্পষ্ট করে কিছু বলা না গেলেও ধারণা করা হয় যে বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর এর মধ্যে কাজ করে যেমন লাইফ স্টাইল , খাদ্য , ইত্যাদি। বিভিন্ন রিসার্চে পাওয়া পরিসংখ্যান ও তথ্যাদি এর ভিত্তিতে মনে করা হয় যে হেলিকোব্যাকটোর পাইলোরি ( H.pylori ) , যা কিনা একটি ব্যাকটেরিয়া এবং স্টম্যাক আলসার এর জন্য প্রধানত দায়ী , একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে পরে। এছাড়া সম্ভাব্য কারণ বা রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে পরে , স্মোকিং , ওভার ওয়েট , স্মোকড খাবার মানে তন্দুরি টাইপের খাবারের অত্যধিক ভোজন দীর্ঘদিন ধরে ,কোলমাইন , মেটাল , রাবার ইন্ডাস্ট্রি তে কাজ করা , অ্যাসবেসটস এ বেশি এক্সপোসার , এবং আমাদের শরীরের কিছু সুনির্দিষ্ট জিনের অসময়ে অস্বাভাবিক ভাবে জেগে ওঠা।
আমাদের স্টম্যাকের যে সেল বা মাংসপেশির লাইনিং আছে তাতে ক্যান্সার এর টিউমার বা ঘা এর ছড়িয়ে পরার ভিত্তিতে রোগটির স্টেজিং করা হয়।
স্টেজ ১ – এই স্টেজ এ টিউমার টি স্টম্যাকের একদম উপরের দিকের লাইনিং এ আবদ্ধ থাকে ( মিউকোসা আর সাবমিউকোসার মধ্যে )
স্টেজ ২ – এই ক্ষেত্রে মিউকোসা এবং সাবমিউকোসা ছাড়িয়ে টিউমার বা ঘা টি মাসল লেয়ার এ পেনিট্রেট করে। এছাড়াও আশেপাশের লিমফ নোড এও ছড়াতে পারে।
স্টেজ ৩ – এই ক্ষত্রে ক্যান্সার এর প্রভাব আগের তিনটি লেয়ার ছাড়িয়ে স্টম্যাক মাসল এর শেষ লেয়ার সেরোসা পর্যন্ত পেনিট্রেট করে এবং বিভিন্ন লিমফ নোডস এও ছড়িয়ে পরে।
স্টেজ ৪ – এই স্টেজ এ ক্যান্সার স্টম্যাক থেকেও বাইরে বেরিয়ে দূরবর্তী ইন্টারনাল অর্গান গুলোকে যেমন যকৃৎ বা ফুসফুস কে ও আক্রান্ত করে।
( বোঝার সুবিধার জন্য , একটা ইলাস্ট্রেশন পিক দেয়া আছে )
স্টম্যাক ক্যান্সার এর লক্ষণ যদিও অনেক সময় ই আগে থেকে বোঝা যায় না , সাধারণত যখন ধরা পরে অনেক টা অ্যাডভান্স স্টেজ এই ধরা পরে। তাও নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলি স্টম্যাক ক্যান্সার এর ক্ষেত্রে অনুভূত হতে পারে যদিও না হতেও পারে…………………..
১। পেটে ব্যাথা বা একটা অদ্ভুত ডিসকম্ফোর্ট
২। খিদে কমে যাওয়া , ওজন কমে যাওয়া হটাৎ করে
৩। বদহজম , বুক জ্বালা
৪। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
৫। পাতলা পায়খানা বা কষে যাওয়া
৬। খাবার সময় এমন অনুভূত হওয়া যেন গলায় খাবার আটকে আছে
৭। ক্লান্ত ও অবষণ্ণতা
৮। অ্যাডভান্স স্টেজ এ বমির সাথে রক্তপাত
৯। অ্যাডভান্স স্টেজ এ পায়খানা আটকে যাওয়া
তাই যেকোনো রকম গ্যাস্ট্রিক আলসার বা প্রব্লেম যদি মাসাধিক কাল ঠিক মতো ডায়াগনসিস করা না যায় , তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রাথমিক ভাবে পায়খানা পরীক্ষা, বেরিয়াম সোয়ালো টেস্ট বা এন্ডোস্কোপি করে ক্যান্সার এর অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনুমান করা হয়। এই ধরণের পরীক্ষায় সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে বায়োপসি করে সিওর হওয়া যায়। কিন্তু স্টেজ সম্বন্ধে নিশ্চিত হবার জন্য সিটি স্ক্যান ,ডায়াগনস্টিক ল্যাপ্রোস্কোপি এবং পেট সিটি স্ক্যান করা হয়।
Take Home Note :
1. যদি আপনি কখনো H.Pylori দরুন আলসার এ ভুগে থাকেন , আপনার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
2. যেকোনো GI প্রব্লেম কখনোই পুষে না রেখে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
3. যেহেতু স্টম্যাক ক্যান্সার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পরে দেরি তে , তাই ধরা পড়া মাত্রই ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়া উচিত।
4. যে হাসপাতালে ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট শুরু করতে দেরি হয় , সেটি বড় এবং ভালো হাসপাতাল হলেও রুগীর জন্য কখনোই ভালো হতে পারে না।