7 নভেম্বর , ভারতবর্ষে দিনটাকে জাতীয় ক্যান্সের আওয়ারেনেস ডে হিসেবে দেখা হয়।
ক্যান্সার নিয়ে যেমন নতুন করে কিছু বলার নেই ঠিক তেমনি অনেক কিছুই বলার আছে যেগুলো অত্যন্ত বিষয়ভিত্তিক বলে খুব সাধারণভাবে বলে ওঠা যায় না।
আজকে আমরা জানি যে ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, ইউটেরাস ক্যান্সার ,প্রোস্টেট ক্যান্সার, লাংস ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, স্টমাক ক্যান্সার সবগুলোই আমাদের ভারতবর্ষের ক্যান্সার মানচিত্রে অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে বাড়ছে এবং আমরা এও জানি ক্যান্সার হলে তার উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও আজকাল ভারতবর্ষের বেশকিছু নামি হাসপাতালে যথেষ্ট আধুনিক ও উন্নত। আমরা জানি ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট আর আগের মত কস্টলি নয় বরং এখন সাধারণ মানুষের অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে এসেছে।
আমি তাই আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একজন ক্যান্সারের এগেনস্টে ফাইটার হিসেবে যে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্ট আলোচনা করতে চাই সেগুলো তুলে ধরছি, যেগুলি আমরা সচরাচর খেয়াল করি না।
প্রথমত, ক্যান্সার কিন্তু কখনো বসে থাকে না। ট্রিটমেন্ট যথাসম্ভব শীঘ্রই শুরু না হলে সে তার নিজের মতো করেই ছড়াতে থাকে বা বাড়তে থাকে। তাই ক্যান্সার ধরা পড়লে সর্বপ্রথম উচিত হচ্ছে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি তার চিকিৎসা শুরু করা, আর এখানেই আমরা সাধারন মানুষরা বড্ড বেশি ভুল করে ফেলি। আমরা চোখ বন্ধ করে ভারতবর্ষের একটি বা দুটি হাসপাতালের দিকে দৌড়াই। আর সেই হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা সহজলভ্য হলেও এবং চিকিৎসা আধুনিক হলেও এত সেখানে ভিড় যে জুনিয়ার ডক্টরকে প্রাথমিকভাবে দেখিয়ে সিনিয়ার ডক্টর কে রিপোর্ট সাবমিট করতে করতেই প্রায় মাসখানেক অতিক্রম হয়ে যায় তারপরে আসে আসল ট্রিটমেন্ট যা কিনা হয় সার্জারি, কেমো বা রেডিয়েশন। এই সার্জারি বা কেমো, রেডিয়েশনের ডেট পেতে পেতে চলে যায় আরো পনেরো-কুড়ি দিন। তার মানে হলো একজন রোগী যখন সেই প্রথিতযশা ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে তারপর তার আসল ট্রিটমেন্ট শুরু হচ্ছে দেড় থেকে দুমাস পরে আর এখানেই কিন্তু আমাদের ট্রিটমেন্টের ফ্যালাসি। ওইযে আগে বললাম, ক্যান্সার কখনো থেমে থাকে না তাই এই দেড় দু’মাসেও সে এক স্টেজ থেকে আরেক স্টেজে অনায়াসে অতিক্রম করে যায় তার সঙ্গে যেটা হয় সেটা হল চিকিৎসার খরচের ঊর্ধ্বমুখী গতি তার সাথেই রোগীর আয়ুর নিম্ন গমন।
তাই সর্বপ্রথম যখন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার প্রশ্ন আসছে বিবেচনার মধ্যে রাখুন এমন হাসপাতাল যেখানে প্রথম দিন থেকে বা বলা যেতে পারে Day 1 থেকে তার চিকিৎসা শুরু হবে।
দ্বিতীয়তঃ ক্যান্সারের চিকিৎসা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি সুতরাং এখানে খরচ দীর্ঘমেয়াদে দেখতে গেলে বেশ ভালোই হয়। তাই এমন হাসপাতাল চয়ন করা উচিত যেখানে প্রথমেই বিশাল খরচা হবে না। বুঝিয়ে বলি, প্রথমেই নামি ব্র্যান্ডেড কর্পোরেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক সার্জারি বা অন্যান্য চিকিৎসাতেই 5/6 লাখ টাকা বিল উঠে যায়। তারপর সার্জারি পরবর্তী যে ফলো আপ ট্রিটমেন্ট বছরের পর বছর চালিয়ে যেতে হয় দেখা যায় বহু ক্ষেত্রেই তার তখন টাকা থাকে না সুতরাং সে ক্ষেত্রে রুগীর কিন্তু পুরোপুরি উপসম হলো না । তাই এই দিক তাও নজরে রাখতে হবে।
তৃতীয়ত : বহু ক্যান্সার হাসপাতালেই যথাযথ ক্যান্সার বিভাগ এবং তার সহযোগী বিভাগগুলো থাকেনা এবং সেই সমস্ত হাসপাতলে আধুনিক এবং উন্নত মানের টেকনোলজির সাপোর্ট ও থাকে না । তাই যে কোন হাসপাতালে যাওয়ার আগে খতিয়ে দেখবেন সেখানকার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডক্টর দের যথাযথ ক্যান্সারের ডিগ্রী আছে কিনা কারণ অনেক ডক্টর ই ক্যান্সার রোগের ট্রিটমেন্ট করতে করতে অনকলজিস্ট হয়ে যান কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যারা ক্যান্সার নিয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রী অর্জন করেছেন তাদের কাছে দেখানো। আর সাপোর্টিভ অন্যান্য মেডিকেল ডিপার্টমেন্ট থাকাটা খুব দরকার কারণ যেকোন ক্যান্সারের চিকিৎসা তেই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সাথে সাথে সাপোর্টিভ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতা লাগে।
চতুর্থ : পরিশেষে খেয়াল করবেন যে, হাসপাতালে যে অঙ্কলজিস্ট কে দেখাচ্ছেন, হাসপাতাল থেকে ট্রিটমেন্ট করে ফিরে আসার পর কোনো কারণে সেই অংকলজিস্ট কে খুব সহজেই আপনি যোগাযোগ করতে পারবেন, কি পারবেন না ! কারণ, পরবর্তী চিকিৎসায় অনেক সময়ই লোকাল যে ডক্টর দেখছেন আপনার রুগী কে, তার একটু গাইডেন্সের দরকার হতে পারে মূল ডাক্তারের কাছ থেকে সেখানে ডক্টর টু ডক্টর কথা বলানো খুব প্রয়োজন। অনেক বড় হাসপাতালেই এই ব্যাপার টা একটা বড় গ্যাপ এরিয়া, যে মূল ডক্টর এর সাথে পরবর্তীকালে ফলোআপ আলোচনায় দূর থেকে কথা বলতে চাইলে কথা বলা যায়না।
তাই আজকের জাতীয় ক্যান্সার আওয়ার্নেস দিবসে আসুন কান্সার রোগের সাথে সাথে , রুগী কল্যাণের সাথে যুক্ত , এই ছোট্ট ছোট্ট কিছু ইস্যুও আমরা মনে রাখি যাতে রুগী তার সর্বোচ্চ পরিষেবা পেতে পারে।
হাসপাতাল চয়ন ও চিকিৎসা গাইডেন্স এর জন্য, প্রয়োজনে এই বন্ধু কে নক করতেই পারেন।
সব্বার সুস্থতা কামনা করি।
ধন্যবাদ,