আজকে আলোচনা করবো হজকিন্স লিম্ফোমা সম্বন্ধে।
সাবজেক্ট এ ঢোকার আগে একটু বুঝিয়ে বলি আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম কি ভাবে কাজ করে। আমাদের ইম্মিউনিটি সিস্টেম মূলত শ্বেত রক্ত কণিকা লিম্ফোসাইটস এর মাদ্ধমে আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরী করে। এন্টিবডি আমাদের শরীরের মধ্যে যে কোনো ইনফেকশন এর সাথে লড়াই করে আমাদের বাঁচায়। আমরা যে বিভিন্ন রকম ভ্যাকসিন ছোটবেলা থেকেই নিয়ে আসছি সেগুলির মূলত কাজ ই হলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার এন্টিবডি তৈরী করে রাখা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এই এন্টিবডি তৈরির জন্য আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু গ্ল্যান্ড আছে বা বলা যেতে পারে কারখানা বা ফ্যাক্টরি আছে যেমন আমাদের ন্যাসাল প্যাসেজের পিছনে এডিনয়েড গ্লান্ড , হাড়ের মধ্যে অস্থিমজ্জা , স্প্লিন বা প্লীহা , গলার টন্সিল , বুকের হাড়ের বা বক্ষ পিঞ্জরের ঠিক ভিতরে থাইমাস গ্লান্ড আর লিমফ নোডস।
এই লিমফ নোড আমাদের সারা শরীরে একটা নেটওয়ার্ক এর মতো ছড়িয়ে থাকে। আর এই লিমফ নোড এর যে নেটওয়ার্ক , তার মধ্যে যে ক্যান্সার হয় তাকেই বলে হজকিন্স লিম্ফোমা বা হজকিন্স ক্যান্সার।
এই হজকিন্স লিম্ফোমার ক্ষেত্রে বি – লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা গুলি অস্বাভাবিক ভাবে নিজেদের বিভাজিত করতে শুরু করে এবং বাড়তে থাকে। এগুলি জমা হতে থাকে লিমফ গ্লান্ড গুলির ভিতরে যার ফলে একদিকে লিমফ গ্লান্ড গুলি ইনফেকশনের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা হারাতে থাকে ও গ্লান্ড গুলি টিউমার এর আকারে ফুলতে থাকে। এর ফলে যে রুগী ,সে ক্রমাগত বিভিন্ন ইনফেকশনে ভুগতে থাকে।
হজকিন্স লিম্ফোমা সাধারণত শুরু হয় আমাদের শরীরের উপরিভাগের গ্লান্ড গুলি থেকে যেমন , ঘাড় , গলা , বুক ও বগলের নিচের গ্লান্ড গুলি সবার আগে এফেক্টেড হয় তারপর যথা সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে আরো দূরের গ্লান্ড গুলি তে ছড়িয়ে পরে।
হজকিন্স লিম্ফোমা এর প্রাথমিক সিম্পটমস গুলি প্রায় নিম্নরূপ।
১। ঘাড় , বগল বা কুঁচকি এর গ্লান্ড গুলি র ফুলে যাওয়া , ব্যাথা থাকতেও পারে বা নাও থাকতে পারে
২। অকারণ ক্লান্তি অনুভব করা
৩। থেকে থেকেই জ্বর আসা
৪। খিদে কমে যাওয়া এবং ওজন কমে যাওয়া
৫। শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকুনি
৬। রাতে অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া ইত্যাদি।
এই ধরণের ক্যান্সার খুব ই কমন এবং সবথেকে বড়ো কথা হলো চিকিৎসা করলে সেরে ওঠার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
এই ধরণের ক্যান্সার এর মূল চিকিৎসা সাধারণত কেমো থেরাপি , রেডিয়েশন এবং দরকারে পেরিফেরাল স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট। রুগী ভেদে এবং রোগের বিস্তার ভেদে ডক্টর প্যানেল এটা ডিসাইড করেন যে কি ভাবে প্রটোকল টা চালু করা হবে।
খুব প্রাথমিক স্টেজ এ এই রোগ ধরা পড়লে ৫ বছর মেয়াদে সারভাইভাল রেট প্রায় ৯৪ % তবে যত দেরি তে এই রোগ নির্ণয় হবে ততো এই রেট কমতে থাকবে এবং প্রায় গড়ে ৮৫ % হয়।
এবার আসি সম্যক DO ‘s এবং Don’t এ।
Do’s –
* যদি শরীরের কোথাও কোনো গ্লান্ড ফুলে মাসাধিক কাল থাকে ( ব্যাথা হীন হলেও ) তাহলে একবার লোকাল সার্জেন কে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। লোকাল সার্জেন আপনাকে সি টি স্ক্যান করতে বলতে পারেন। কারণ রক্ত পরীক্ষায় এই ক্যান্সার ধরা পরে না। সি টি স্ক্যান এর পর ডক্টর তেমন বুজলে একটা FNAC বা বায়োপসি করতে বলতে পারেন। তৎক্ষণাৎ করিয়ে নেবেন ফেলে না রেখে।
* বায়োপসি তে পসিটিভ বেরোলে প্রথমেই হিমাটো অনকোলজিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করবেন। উনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আপনাকে মেডিকেল অনকোলজিস্ট এর কাছে রেফার করতে পারেন।
* প্যানিক করবেন না , অহেতুক আতংকিত হবেন না। এই রোগ ঠিক সময়ে নির্ণয় হলে আপনার প্রায় স্বাভাবিক জীবনকাল ই সাউথ থাকবেন মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে।
Don’t :
* চারিপাশের লোকজন কে বলে বেড়াবেন না। নন মেডিকেল লোকজন এর ৯৯% এর ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট সম্বন্ধে না আছে জ্ঞান না আছে বোধ , তারা আপনাকে প্রথাগত গোটা বাঁধা দুটি হাসপাতালের নাম বলে বিভ্রান্ত করবে তাতে আপনার ক্ষতি বই লাভ হবে না।
* অযথাই দেশের বাইরে গেলেই সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে এই ধারণা ঠিক নয়। বাংলাদেশেও অনেক ভালো ডক্টর আছেন। আগেই তাদের উপর আস্থা হারাবেন না। দরকারে আমাকে নক করতে পারেন বিনা স্বার্থে গাইডেন্স পাবার জন্য।
* দেশের বাইরে যদি চিকিৎসা হেতু যেতেই হয় তাহলে পাসপোর্ট ভিসা তে কিছুটা সময় নষ্ট হয়। সেই সময় দেশে চিকিৎসা চালু করে দেয়া উচিত।
* এমন খরুচে হাসপাতালে যাবেন না যেখানে আপনার ১০০ % বাজেট প্রাথমিক চিকিৎসা বা অপারেশনে খরচ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন ক্যান্সার চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদি। তাই মূল চিকিৎসার পরেও দীর্ঘকালীন ফল আপ চিকিৎসা
চালিয়ে যেতে হয়। সুতরাং আপনার হাতে বাজেট ১০০ টাকা থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসায় কখনোই ৫৫ থেকে ৬০ টাকার বেশি খরচ করবেন না। বাকি টাকা পরবর্তী চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ রাখবেন।
* তবে খরচ বাঁচাতে গিয়ে এমন হাসপাতালেও যাবেন না যেখানে চিকিৎসা শুরু হতেই মাসাধিক কাল লেগে যায়।
* আরেক টা বিশেষ ইম্পরট্যান্ট জিনিস মনে রাখবেন যে , যে হাসপাতালেই চিকিৎসা কোরান না কেন , যদি দেশের বাইরে হয় তাহলে প্রতি ৩ মাস বা ৬ মাসে একটা করে ফল আপ ভিসিট লাগবে। এটা দরকারি। কিন্তু অনেক হাসপাতালেই এই ফল আপ চিকিৎসার খরচ টা বাঁচানো যায় যদি আপনি সেখানকার ডক্টর কে ডিরেক্টলি টেলি কন্সালটেশনের মাধ্যমে কানেক্ট করতে পারেন। এতে সুবিধা হলো আপনার চিকিৎসা এক হাতে থাকবে এবং আপনি সেফ থাকবেন।
* ক্যান্সার এর চিকিৎসায় কখনোই একাধিক এটেন্ডেন্ট কে নিয়ে বিদেশ সফর করবেন না। কারণ খরচ প্রাথমিক ভাবে যত টা বাঁচাতে পারবেন ততই ভবিষ্যতের পক্ষে আপনার মঙ্গোল।
আশা করি খুব সংক্ষেপে মূল বক্তব্য টা বোঝাতে পেরেছি। কোনো প্রকার প্রশ্ন বা সাহায্য লাগলে বিনা দ্বিধায় আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ধন্যবাদ।