এন্ডমেট্রিয়াম ক্যান্সার বা জরায়ুর গা এর ক্যান্সার :
ক্যান্সার নিয়ে আমি যখন ই কিছু বলি, বার বার মনে করিয়ে দিতে চেষ্টা করি কিছু থাম্ব রুল।
পয়েন্ট নং ১ – যেদিন ক্যান্সার ধরা পরবে , চিকিৎসা তৎক্ষণাৎ শুরু হওয়া দরকার।
পয়েন্ট নং ২ – হাসপাতাল যতো বড়ো বা নামী ই হোক না কেনো, যদি চিকিৎসা শুরু করতে মাসের পর মাস লেগে যায় , তাহলে সেই হাসপাতাল অন্তত ক্যান্সার রুগীর জন্য ভালো হতে পারে না। নাম দেখে ছুটবেন না , রোগ ও রুগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে দৌড়ান।
পয়েন্ট নং ৩ – আপনি যদি আমার মতোই খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত হোন, তাহলে কখনোই উচ্চ খরচের হাসপাতাল দিয়ে চিকিৎসা শুরু করবেন না। হাতে ১০০ টাকা থাকলে , হাসপাতালে আপনার খরচ করে আসা উচিত ৬০ টাকা এবং বাকি ৪০ টাকা বাঁচিয়ে দেশে বা বাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত কারণ ওই টাকা টা ফলো আপ চিকিৎসায় লাগবে। শত ভালো অপেরেশন বা চিকিৎসা হলেও যদি ফলো আপ থেরাপি ঠিক মতো না হয় , তাহলে ক্যান্সার আবার দ্রুত ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
এই তিনটি খুব দরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মাথায় রেখে আজকে আমরা আলোচনা করবো এন্ডোমেট্রিয়াম ক্যান্সার নিয়ে।
খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে জরায়ুর ভিতরের দেয়াল এ একটি বিশেষ কলা-কোষ এর আস্তরণ থাকে , এই কলা-কোষের আস্তরণ কেই বলে এন্ডোমেট্রিয়াম। একে ইউটেরাইন ক্যান্সার ও বলা হয়ে থাকে। জরায়ুতে অন্যান্য কিছু ধরণের ক্যান্সার ও দেখা যায় কিন্তু এই এন্ডোমেট্রিয়াম ক্যান্সার টি সব থেকে বেশি পরিলক্ষিত হয় বা বেশি দেখা যায়।
আসুন একটু দেখে নেই যে এই এন্ডোমেট্রিয়াম টি আসলেই কি ! এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর একদম ভিতরের আস্তরণ হবার ফলে এখানেই একটি বাচ্চার জন্মের শুভ সূচনা হয়। মহিলাদের মাসিক চক্রের সাথে হরমোনের ওঠানামা হয় এবং তাতে এন্ডোমেট্রিয়াম এর ও আকারে ও আচরণে পরিবর্তন আসে। গর্ভধারণের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এই এন্ডোমেট্রিয়াম এর লেয়ার ঠিক একটা গদি যুক্ত বিছানার মতো কাজ করে এবং ভ্রূণ কে আটকিয়ে রাখে বা ধরে রাখে ও পুষ্টি যোগায়। আর গর্ভধারণের সময় ছাড়া ইস্ট্রোজেন হরমোন এর ক্ষরণ কম হয়ে যায় সেই সময় প্রোজেস্টেরন বলে আরেক টি হরমোন বেশি করে ক্ষরিত হয়। এই প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে এন্ডোমেট্রিয়াম এর কোষ এর আস্তরণ টি আলগা হয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে বেরিয়ে আসে যাকে আমরা মেনস্ট্রুয়েশন বা মাসিক বলে থাকি।
এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার কে অনেকসময় ই খুব প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায় কারণ এর একটি বড়ো লক্ষণ হলো অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ ভ্যাজাইনার মাদ্ধমে।
তাই মেনোপজের পর ও যদি অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হয় , বা দুই পিরিয়ডস এর মধ্যেও অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় এবং যদি দীর্ঘকালীন সময় ধরে কোমর অঞ্চলে ( পেলভিক রিজিওন ) ব্যাথা অনুভূত হয় , তাহলে আর দেরি না করে কোনো ভালো স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য নেয়া উচিত।
ডক্টর রা সাধারণত লক্ষণ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার মাদ্ধমে যেমন ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড বা হিস্টেরোস্কোপি ( ভ্যাজাইনার মাদ্ধমে একটি সরু লেন্স যুক্ত নল উটেরাস পর্যন্ত ঢুকিয়ে নিরীক্ষণ করা ) এর মাধ্যমে এই ধরণের ক্যান্সার কে শনাক্ত করতে পারেন।
সাধারনণত যাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে বা অন্যান্য রোগের কারণে হরমোন এর লেভেল এর অধিক ওঠা পড়া হয় , বা যিনি কখনোই গর্ভবতী হন নি , পরিবারে কোলন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে , খুব কম বয়সে ঋতুমতী হলে বা দেরি তে মেনোপজ হলে তাদের এন্ডোমেট্রিয়াম ক্যান্সার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আজকের দিনে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার অবদানে , খুব প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে সার্জারি বা দরকারে সার্জারির পর ও কেমো এর মাধ্যমে রোগ টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ও বহু ক্ষেত্রে ক্যান্সার মুক্ত ও হওয়া যায়। শুধু দরকার একটু সচেতনতা। তাই যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণগুলি পুষে না রেখে সময় থাকতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন এবং নিজেকে ক্যান্সার থেকে দূরে রাখুন।
ধন্যবাদ।