আজকে মেডিকেল আপডেট এ আমরা আলোচনা করবো ও বোঝার চেষ্টা করবো ব্লাড ক্যান্সার কি , কেন হয় ও হলে কি করণীয়।
যখন আমাদের শরীরে রক্তের অস্বাভাবিক কোষ গুলি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং সেটি আমাদের নরমাল রক্ত কণিকা গুলির কার্যক্রমে ( fight against infection ) বাধা সৃষ্টি করে তখন তাকে ব্লাড ক্যান্সার বলে।
বেশিরভাগ রক্তের ক্যান্সার, যাকে হেম্যাটোলজিক ক্যান্সারও বলা হয়, অস্থি মজ্জা থেকে শুরু হয়, যেখানে রক্ত তৈরি হয়।
ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলি : কিছু সাধারণ ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:-
১। জ্বর, সর্দি
২। অবিরাম ক্লান্তি, দুর্বলতা
৩। ক্ষুধা হ্রাস, বমি বমি ভাব
৪। অসাভাবিক ওজন হ্রাস
৫। রাতের ঘাম
৬। হাড় / জয়েন্টে ব্যথা
৭। পেটে অস্বস্তি
৮। মাথাব্যাথা
৯। নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
১০। ঘন ঘন সংক্রমণ
১১। ত্বকে চুলকানি বা ত্বকের ফুসকুড়ি
১২। গলায় , আন্ডারআর্মস বা কুঁচকি তে ফোলা লিম্ফ নোড
তিন রকমের ব্লাড ক্যান্সার সাধারণত দেখা যায় কিন্তু তাদের সবার ই লক্ষণ গুলো মোটামুটি এক ই।
১। লিউকেমিয়া – এই ক্ষেত্রে শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা গুলি আক্রান্ত হয় ও স্বাভাবিক কাজকর্ম ( শরীরে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই ) ব্যাহত হয়। এই ক্ষেত্রে অপরিণতি স্বেত রক্ত কণিকার পরিমান শরীরে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়।
২। লিম্ফোমা – লিম্ফোমা শরীরের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, যা মানবদেহকে সংক্রমণ এবং রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। লিম্ফোমা হাড়ের মজ্জা, রক্ত এবং অন্যান্য সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হতে পারে।
৩। মায়েলোমা – মায়েলোমা হ’ল মজ্জাতে পাওয়া প্লাজমা কোষগুলির একটি ক্যান্সার। প্লাজমা কোষগুলি অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা দেহের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। এবং যখন প্লাজমা কোষগুলি মায়েলোমা তে পরিণত হয়, তখন তারা অ্যান্টিবডিগুলির স্বাভাবিক উত্পাদন প্রতিরোধ করে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
ব্লাড ক্যান্সার শনাক্ত করার প্রধান উপায় গুলো হলো ব্লাড টেস্ট যেখানে প্রত্যেক রকম ব্লাড পার্টিকলেস বা শ্বেত রক্ত কণিকা এবগ তাদের সব টাইপ্স ও লোহিত রক্তকণিকার পরিমান দেখা হয়। মাল্টিপল মায়েলোমা তে যে সব মানুষ ভুগছেন তাদের ব্লাড এ অনেক সময় দেখা যায় বেশি মাত্রায় নির্দিষ্ট কিছু ধরণের ইম্মুনোগ্লোবিন। এটা ইলেক্ট্রোফোরেসিস করে দেখা হয় সাধারণত। আরেক ধরণের টেস্ট হয় টিউমার মার্কার টেস্ট। আমি খুব গভীরে যাচ্ছি না , শুধুমাত্র একটা সম্মক ধারণা প্রদানের চেষ্টা করছি মাত্র।
ব্লাড ক্যান্সার এর ট্রিটমেন্ট হলো কেমোথেরাপি , রেডিওথেরাপি এবং ক্ষেত্র বিশেষে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট । ব্লাড ক্যান্সার এর প্রকারভেদ ও কোথায় হয়েছে তার উপর নির্ভর করে ট্রিটমেন্ট রুগী অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
Q. ব্লাড ক্যান্সার কি পুরোপুরি নিরাময় করা যায়?
And : ভাগ্যক্রমে, ব্লাড ক্যান্সার হ’ল এমন এক ধরণের ক্যান্সার, যার নিরাময়ের হার অত্যন্ত বেশি। কিছু ব্লাড ক্যান্সার যেমন দীর্ঘস্থায়ী লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া এবং মায়েলোমা সাড়ে না , তবে রোগীরা কয়েক দশক ধরে বেঁচে থাকতে পারে, কখনও কখনও স্বল্পতম ও সঠিক চিকিত্সার মাধ্যমে।
Q.রক্ত ক্যান্সারের বেঁচে থাকার হার কত?
Ans: লিউকেমিয়ার বেঁচে থাকার হার ৫৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য যথেষ্ট বেশি। অধুনা প্রাপ্ত রিসার্চ এ বলা হয়েছে যে ৫ বছরের মেয়াদ ক্রমে প্রায় ৬১.৫ % রুগী রা সাধারণত বেঁচে থাকেন সঠিক চিকিৎসার মাদ্ধমে।
সুতরাং কখনো যদি চেনা পরিচিতের কাছে এই রোগের খবর পান, প্রথমেই বলবেন ঘাবড়ে না যেতে।
এই ক্ষেত্রে প্রধান করণীয় হলো –
১। ঘাবড়ে না যাওয়া
২। সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করা
৩। এই চিকিৎসার জন্য ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল সব জায়গাতেই এক ই রকম। সুতরাং পকেটের টাকা অযথা খরচ করে শুধু শুধু মুম্বাই না ছুটে ঘরের কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
৪। এমন জায়গায় যাবেন না যেখানে চিকিৎসা শুরু হতে অনেক দেরি হয় যেমন ভেলোর বা মুম্বাই এর বিশেষ কিছু হাসপাতাল।
৫। এই ক্ষেত্রে প্রথমে নিজের দেশেই চিকিৎসা করুন। যদি দেশের বাইরে যেতেই হয়, তবে কলকাতা চুজ করুন কারণ এখানে খরচ সব থেকে কম। জানবেন ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট এ প্রথমেই দামি হাসপাতাল এ গেলে পকেটের টাকা শেষ হতে সময় লাগবে না , সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য ঘটি বাটি বেচতে হবে। তাই চিকিৎসা শুরু করুন সাধারণ ক্যান্সার হাসপাতাল এ যেখানে ভালো কেমো এবং রেডিয়েশনের ব্যবস্থা আছে। এতে আপনি দীর্ঘ মেয়াদি ট্রিটমের্ন্ট চালাতে পারবেন । আর ট্রিটমেন্ট দীর্ঘ মেয়াদি চালাতে পারলেই কিন্তু রোগ টি থেকে অনেকাংশে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
৬। ফেসবুকে বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট গ্রুপে অযথা জিজ্ঞেস করবেন না। সেই ক্ষেত্রে দুটো উত্তর ই পাবেন সেটা হলো মুম্বাই যান আর ভেলোর যান। কারণ সেখানে যারা মন্তব্য করেন , অধিকাংশের ই রোগের প্রোগনোসিস সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই।
৭। বিভ্রান্ত হবেন না।
৮। বেশি লোকের সাথে আলোচনা করে সময় নষ্ট করবেন না। জানবেন নন মেডিকেল পারসন দের ” যত মুনি তত মত ” । তাই নিজে সিদ্ধান্ত নিন এবং এমন জায়গায় যান যেখানে প্রথম দিনেই চিকিৎসা শুরু হতে পারে।
কখনো মতামত লাগলে অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন।
ধন্যবাদ ।