ক্যান্সার এর ৪থ স্টেজ মানেই কি সব শেষ ?
মোটেও না।
আমার স্বামী ডাক্তার , বাংলাদেশে।
তিনি তার প্রোস্টেট ক্যান্সার আমাদের না জানিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন দুই বছর। শেষে বাড়াবাড়ি হবার পর যখন আমরা জানলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ইন্ডিয়ান ক্যান্সার ট্রিটমেন্টের কর্ণধার দাদা এর কথা অনেকের মুখে শুনেছিলাম। তার সাথে যোগাযোগ করি। উনি আমাদের ব্যাঙ্গালোর এর একটি হাসপাতালে যাবার জন্য পরামর্শ দেন। আক্ষেপের সাথে বলছি যে তখন ফ্যামিলির চাপে তার কথা শুনি নি এবং কলকাতায় একটি বিখ্যাত হাসপাতালে ওনাকে নিয়ে ভর্তি করি। বিশ্বাস করতে পারছি না আজ ও যে সেখানে দীর্ঘ ২৪ দিন ভর্তি করিয়ে রেখে সেই বিখ্যাত হাসপাতাল এক গাদা টাকা খরচ করিয়েও সেরকম কোনো চিকিৎসায় শুরু করে নি বরং বলেছিলো আর বিশেষ কিছুই করার নেই , রুগী হাঁটতে পারলে আপনারা নিয়ে দেশে ফিরে যান। অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছিলো।
লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আবার ইন্ডিয়ান ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করি। দাদা কমার্শিয়াল নন। তাই আমাকে প্রথমে একপ্রস্থ খুব বকলেন। তারপর কলকাতা তে ই একটি ক্যান্সার হাসপাতালে ওনাকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। আগে যে নামি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম তারা রিপোর্ট ছাড়তে চাইছিলো না। দাদা আমাদের গাইড করিয়ে অবশেষে রিপোর্ট ও ছাড়িয়েছিলেন।
তারপর দীর্ঘ দুই মাস আমরা ওখানে পড়ে থেকে কেমো আর ইমিউনো থেরাপি নেই। খরচ ওখানেও হয়েছিল কারণ কেমো তে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল সেগুলো হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেবার কেমো , তার উপরে ইমিউনো থেরাপির ইনজেকশনের খরচ এমনিতেই বেশি। কিন্তু কিছু করার ছিল না। কিন্তু চিকিৎসায় কাজ হচ্ছিলো।
আমরা এখনো প্রতি মাসে একটি করে ইনজেকশন চালিয়ে যাচ্ছি। মোট ৬ টি ইনজেকশন দিতে হবে। কিন্তু যে রুগী কে কলকাতার সেই বিখ্যাত হাসপাতাল ” আর কিছু করার নেই ” বলে ফেলে রেখে দিয়েছিলো, সেই রুগী যে এখন তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন , আমাদের সবার মাঝেই আছেন সেটাই তো বড়ো কথা।
নিজের বিবেকের দংশন থেকে বলছি , প্রথমেই যদি ইন্ডিয়ান ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট এর বিখ্যাত দাদা এর কথা শুনতাম তাহলে এতদিন দেরিও হতো না আর অযথা এতগুলো টাকা ওখানে শুধু শুধু ফেলে রেখে নষ্ট হতো না।
একটা জিনিস এরমধ্যে বুঝেছি যে ক্যান্সার রুগীর উপযুক্ত চিকিৎসা কি ভাবে করা উচিত সেটা অধিকাংশ মানুষ ই না জেনে কোনো বিখ্যাত হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দেন আর এই ব্যাপারে রুগীর সব থেকে বড়ো শত্রু তার নিজের আত্মীয় রা।
ইন্ডিয়ান ক্যান্সার ট্রিটমেন্টের সার্বিক উন্নতি ও যশ, খ্যাতি কামনা করি মানবতার স্বার্থে।
মালতি দেবী ( পদবি গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে দেওয়া হলো না )
17/11/23